বৃহস্পতিবার । ২০শে নভেম্বর, ২০২৫ । ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২
লিবিয়ায় সমুদ্রপথে আবারও নৌকাডুবি

প্রাণ গেলো মুকসুদপুরের ২ যুবকের নিখোঁজ ৫ : বাড়িতে শোকের মাতম

নিজস্ব প্রতিবেদক, গোপালগঞ্জ ও মুকসুদপুর প্রতিনিধি

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ননীক্ষির ইউনিয়নের পশ্চিম লখন্ডা গ্রামের আকোব আলী শেখের ছেলে এনামুল শেখ। পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা আনতে ২১ লাখ টাকার বিনিময়ে দালাল এনামুলের মাধ্যমে গত একমাস আগে ইতালিতে যাবার উদ্দেশ্যে লিবিয়া পাড়ি জমায়। ইচ্ছা ছিলো বিদেশে চাকুরি করে পরিবারের আর্থিক অভাব ঘোচানোর। কিন্তু তার স্বপ্নের সলিল সমাধি ঘটলো ভূমধ্যসাগরে।

শুধু এনামুল শেখ নয় তারমত করুণ পরিণতি ঘটেছে একই গ্রামের জাহিদ শেখের ছেলে আনিস শেখের। নিখোঁজ রয়েছে আরও ৫ যুবক। তারা হলেন, একই উপজেলার পশ্চিম লখন্ডা গ্রামের আওলাদ শেখের ছেলে ইব্রাহিম শেখ, খালেক মোল্লার ছেলে হাবিবুল্লাহ মোল্লা সোহেল, হায়দার মিনার ছেলে আশিক মিনা, ইকরাম মিনার ছেলে দুলাল মিনা ও পার্শ্ববর্তী গুনহার গ্রামের হাফিজ মিনার ছেলে নিয়াজ মিনা। নিহত ও নিখোঁজ পরিবারগুলোর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তাদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা।

গতকাল বুধবার সকালে সরেজমিনে পশ্চিম লখন্ডা গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, দালালের মাধ্যমে প্রায় ২১ লাখ টাকা করে দিয়ে গত অক্টোবরে ইতালির উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে লিবিয়া যান মুকসুদপুর উপজেলার ননীক্ষীর ইউনিয়নের পশ্চিম লখন্ডা ও গুনহার গ্রামের ৮ যুবক। গত ১৩ নভেম্বর রাতে লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরের আল-খুমস তীরের কাছে উল্টে যায় তাদের বহনকৃত ট্রলার। ওই ট্রলারে ছিলেন বাংলাদেশের ২৬ নাগরিক। তাদের মধ্যে ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর ১৬ নভেম্বর নৌকা ডুবির বিষয়টি বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসলে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে স্বজনরা জানাতে পারেন পশ্চিম লখন্ডা গ্রামের আকোব আলী শেখের ছেলে এনামুল শেখ ও জাহিদ শেখের ছেলে আনিস শেখ মারা যায়। এ ঘটনায় আরো ৫ যুবক নিখোঁজ রয়েছে।

এরপর থেকেই নিহত ও নিখোঁজ যুবকদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। স্বজন, প্রতিবেশী ও গ্রামবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে পরিবারের সদস্যরা।

ওই নৌকা দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া পশ্চিম লখন্ডা গ্রামে হায়দার শেখের ছেলে আবুল শেখ ধলা ভিডিও কলে পরিবারের সদস্যদের সাথে ১৬ নভেম্বর কথা বলেছেন। নৌকা ডুবিতে এনামুল ও আনিসের মৃত্যুর কথা জানান দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া নিহত এনামুল শেখের আপন চাচাতো ভাই আবুল শেখ ধলা।

ভিডিও কলে ধলা বলেন, “আমাদের নৌকার ঠিক মাঝে আরেকটি নৌকা উঠে যায়। নৌকার মাঝে এনামুল ও আনিস বসেছিল। মাঝে যারা ছিল তারা সবাই মারা গেছে। নৌকার সামনে যারা ছিল তাদের তেমন ক্ষতি হয়নি। আমি পেছনে ছিলাম। পেছনের সবার শরীর কেটে ছিঁড়ে গেছে। অনেকে সাগরে ভেসে গেছে। আবার অনেকে লাইফ জ্যাকেট নিয়ে সাগরে ভেসেছিল। উদ্ধার কর্মীরা তাদের উদ্ধার করেছে। সবার শেষে তারা আমাকে উদ্ধার করে।

নওখন্ডা গ্রামের শাহজালাল মিয়া ও ইমাম হোসেন বলেন, “বিদেশগমন সংক্রান্ত সচেতনতার পাশাপাশি, দালাল চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া বিদেশে বৈধ অভিবাসন সুযোগ বাড়ানো ছাড়া এ মৃত্যুর মিছিল থামানো যাবে না।”

ননীক্ষির ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য আলমগীর মোল্যা বলেন, “লাখ লাখ টাকা খরচ করে যুবকদের বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। পরিবারগুলো ধার দেনা, গচ্ছিত ও জমি বিক্রির টাকা দালালদের হাতে তুলে দিচ্ছে। অবৈধ সমুদ্র পথে যাওয়াই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এ যাত্রায় আমার ওয়ার্ড থেকে ৮ জন লিবিয়া গেছে। নৌকায় ইটালী যাওয়ার পথে তারা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।” এটি বন্ধ হওয়া দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন।

মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, “নিহত দু’জন ও নিখোঁজদের বিষয়ে আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উচ্চ পর্যায়ে তথ্য পাঠানো হয়েছে।”

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান অধিদপ্তরে গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ষষ্টীপদ রায় বলেন, “বৈধ অভিবাসনের সুযোগ সরকার সৃষ্টি করেছে। সরকারিভাবে বৈধ পথেই ইটালী যাওয়া যায়। এ ব্যাপারে আমরা জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে জনসচেতনতামূলক সভা-সমাবেশ করছি।”

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন